বর্তমান আধুনিক যুগের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো কম্পিউটার। বিশ্বায়নের এই যুগে এখনো কম্পিউটারের নাম শুনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে কম্পিউটারের নাম শুনলেও বেশিরভাগ মানুষই এর আবিষ্কারের ইতিহাস ও কার্যপ্রণালী সম্পর্কে কিছুটা অজ্ঞাত।
একটি বিষয় পরিষ্কার করা জরুরি যে, কম্পিউটার শুধুমাত্র বিনোদন লাভের কোন যন্ত্র নয়, বিনোদনের বাইরেও এর রয়েছে বিশাল এক জগত। চলুন আজকে কম্পিউটার সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে আরেকটু সমৃদ্ধ করে নেয়া যাক।
Table of Contents
কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারনা থাকলেও এর কার্যপ্রণালী ও ব্যবহার সম্পর্কে অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। সাধারণ মানুষজন বেশিরভাগ মনে করেন যে কম্পিউটার শুধুমাত্র একটি বিনোদন লাভের যন্ত্র, কিন্তু কথাটি মোটেও সত্য নয়, বরং কম্পিউটারে বিনোদন সুবিধা যুক্ত হয়েছে শেষের দিকে।
Computer মূলত একটি ল্যাটিন শব্দ যার আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় গণনাকারী যন্ত্র। শুরুর দিকে কম্পিউটারের মূল কাজই ছিলো গণনা করা। গবেষণা বা অন্যান্য বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহৃত গাণিতিক হিসাব নিকাশ গুলো এতটাই জটিল ছিল যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সমাধান করতেই বছরের পর বছর লেগে যেত। কিন্তু কম্পিউটারের আবিষ্কারের ফলে যা কয়েক মিনিটেই সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।
তবে সময়ের সাথে সাথে কম্পিউটার ব্যবহারের পরিধি বেড়েছে। যার ফলে সময়ের পরিক্রমায় এতে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন বিভিন্ন সুবিধা। তাই আধুনিক কম্পিউটার এখন আর শুধু গণনা করার কোন যন্ত্র নয়। বরং বিভিন্ন সেক্টরে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি আরো নতুন নতুন কাজে একে ব্যবহার করার উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে। এখন ইন্টারনেট, ইমেইল, মাল্টিমিডিয়া, গ্রাফিক্স, এডিটিং ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে এ ডিভাইসটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর তাইতো বর্তমান আধুনিক সব প্ল্যাটফর্মেই দেখা মিলবে কম্পিউটার নামক এ যন্ত্রটির।
কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ
কোন একটি ডিভাইস কিভাবে কাজ করে তা জানার জন্য ওই ডিভাইটির বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরী। এর ফলে যন্ত্রটির কার্যপ্রণালী সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। কম্পিউটারকে প্রাথমিকভাবে দুইটি অংশে ভাগ করা যায়-
- হার্ডওয়্যার
- সফটওয়্যার
হার্ডওয়্যার
একটি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে প্রধানত তিনটি অংশে বিভক্ত করা যায়। এ অংশগুলো হলো- ইনপুট ডিভাইস, সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সি পি ইউ এবং আউটপুট ডিভাইস।
ইনপুট ডিভাইস
কম্পিউটারের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য একে নির্দেশনা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর নির্দেশনা বা কমান্ড দেয়ার কাজটি করা হয়ে থাকে ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে। এর জন্য ইনপুট ডিভাইস দিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন, মাউস, কিবোর্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। ইনপুট ডিভাইস এর কাজ-
- বাইরে থেকে তথ্য গ্রহণ করা।
- গৃহীত তথ্যকে কম্পিউটারের (বাইনারি) ভাষায় রূপান্তর করা।
- রূপান্তরিত তথ্যকে কম্পিউটারের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট এ পাঠানো।
কয়েকটি বহুল ব্যবহৃত ইনপুট ডিভাইস-
- মাউস
- কিবোর্ড
- স্ক্যানার
- জয়স্টিক ইত্যাদি
সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা CPU
সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা CPU কে বলা হয় কম্পিউটারের কার্যক্রম পরিচালনার মূল অংশ। মূলত ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে আসা বিভিন্ন নির্দেশ বা তথ্যকে প্রসেস প্রসেস করার কাজটি এ অংশটি করে। এখানে বিভিন্ন নির্দেশনা বা কমান্ড প্রসেস এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল সমূহকে আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে প্রদর্শন করা হয়। সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট এর কাজ-
- গাণিতিক হিসাব নিকাশ ও প্রসেসিং।
- বিভিন্ন কমান্ড বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন।
- আউটপুট ডিভাইসে প্রাপ্ত ফলাফল প্রদর্শন।
- কমান্ড ও কন্ট্রোল ইউনিট হিসেবে যাবতীয় কাজ সম্পাদন।
আউটপুট ডিভাইস
সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট এ প্রাপ্ত কমান্ড বা সমাধানগুলো আমরা যে মাধ্যমে প্রদর্শন করি তাই হচ্ছে আউটপুট ডিভাইস। তাই বলতে গেলে আউটপুট ডিভাইস হলো ফলাফল প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত ইউনিট। আউটপুট ডিভাইস এর কাজ-
- সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রদর্শন করা।
- ফলাফল প্রিন্ট করা।
- CPU এর বিভিন্ন কমান্ড বাস্তবায়ন করা।
বিভিন্ন ধরনের আউটপুট ডিভাইস-
- মনিটর
- প্রিন্টার
- সাউন্ড বক্স
সফটওয়্যার
সফটওয়্যার কে বলা হয় যে কোন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশের প্রাণ। কম্পিউটারের প্রাণ হলো সফটওয়্যার। কোন একটি কম্পিউটারের মধ্যে মূলত দুই ধরনের সফটওয়্যার থাকে: সিস্টেম সফটওয়্যার এবং এপ্লিকেশন সফটওয়্যার।
সিস্টেম সফটওয়্যার
কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ পরিচালনার জন্য প্রধান যে সফটওয়্যারটি রয়েছে সেটি হলো সিস্টেম সফটওয়্যার। এ সফটওয়্যারটি কম্পিউটারের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদনের মূল কাঠামো রূপে কাজ করে। যেমন- উইন্ডোজ, লিনাক্স ইত্যাদি।
এপ্লিকেশন সফটওয়্যার
বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারিক সমস্যার সমাধান কিংবা ডাটা প্রসেসিং এর কাজের জন্য যেসকল সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় সেগুলো কি এপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলে। বাণিজ্যিক সফটওয়্যার এবং বিশেষ কাজ সম্পাদনের জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার গুলো এপ্লিকেশন সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত। যেমন- এডোবি, ক্রোম, মাইক্রোসফট অফিস ইত্যাদি।